রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকাতেই এডিস মশার ঘনত্ব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। গত মাসে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, দুই সিটি করপোরেশনের ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স বা এডিস মশার ঘনত্ব ২০-এর বেশি, যা স্পষ্টতই নির্দেশ করছে যে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা বর্তমানে ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মশক নিধনে কার্যকর উদ্যোগের অভাবেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
বছরের শেষ সময়ে এসেও রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়া অব্যাহত রয়েছে। সাধারণত এ সময়টায় রোগী সংখ্যা কম থাকে, তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। ডিসেম্বরের প্রথম চারদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৮৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী, যা প্রতিদিন গড়ে ৭০০ জনেরও বেশি।
সরকারি তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫০০ জনের বেশি, যা এক বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ।
আইইডিসিআরের জরিপে উঠে এসেছে আরও শঙ্কাজনক তথ্য। নভেম্বর মাসে করা এই জরিপে দেখা যায়, রাজধানীর ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব ২০-এর বেশি। এমনকি কিছু এলাকায় এই ঘনত্ব ৭০ পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা ডেঙ্গুর ঝুঁকির একটি বড় সংকেত।
এদিকে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কেন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, "বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিটনাশক ছিটানো ছাড়া সিস্টেমেটিকভাবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে মশার লার্ভা ধ্বংসের কার্যক্রমও নেই, ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসছে না।"
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী বলেন, "ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানোর জন্য কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়া হয়নি। মশা মারার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।" তিনি আরও যোগ করেন, "এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনও এই পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী।"
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ চলতে থাকবে এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।